কাশি রোধে করণীয়
শীতের সময়টাতে কাশির সিরাপের পেছনে খরচ হয়ে যায়। কারণ এই মৌসুমে ঠান্ডা-কাশি হওয়া খুব পরিচিত সমস্যা। কিন্তু অবাক করা তথ্য হলো, আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির গবেষকরা পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে, কাশির সিরাপ কাশি নিরাময়ে খুব বেশি কার্যকরী নয়।
কিন্তু আমরা এসব সিরাপের বিষয়ে বেশ নিশ্চিন্তই থাকি। আমরা মনে করি, যে এগুলো আমাদের কাশি নিরাময়ে বেশ ভালোভাবেই কাজ করছে। বিশেষ করে শিশুর কাশি হলে নিশ্চিন্ত মনে তাকে কাশির সিরাপ খাওয়ানো অভিভাবকের সংখ্যাও কম নয়। আসলে, কাশি সিরাপগুলোতে কৃত্রিম রং, কৃত্রিম স্বাদ, মিষ্টি এবং উচ্চ ফ্রুটোজ কর্ন সিরাপসহ কিছু বিপজ্জনক উপাদান থাকে বলে এটি উপকারের বদলে ক্ষতি করতে পারে!
কাশি সম্পর্কে যা জানা জরুরি:
কাশি আসলে থেরাপিউটিক। কাশির সময় আমাদের শরীর তার উপরের এয়ারওয়ে প্যাসেজ এবং ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা এবং অচেনা অবাঞ্ছিত উপকরণগুলো অপসারণ করার চেষ্টা করে। কাশি মূলত কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণ। তাই কেন কাশি হচ্ছে তা জানতে পারলে এটি আরও ভালো উপায়ে মোকাবেলা করা সম্ভব।
কাশি শ্লেষ্মা/কফ উৎপাদন করে এবং এধরণের কাশি চেপে রাখা উচিত নয় কারণ এটি শ্লেষ্মা বা কফ পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। এ ধরণের কাশি বেশিরভাগ সময়েই একটি সাধারণ ভাইরাসজনিত অসুস্থতার সাথে যুক্ত থাকে যেমন সাধারণ সর্দি, ফুসফুস বা উপরের শ্বাসনালীর সংক্রমণ (নিউমোনিয়া, ব্রোঙ্কাইটিস), দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস রোগ এবং ধূমপান।
কাশি সাধারণ সর্দি, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যালার্জি, হাঁপানি বা পরিবেশগত দূষণের কারণে হতে পারে। সুতরাং, এ ধরনের কাশির মানে কী হতে পারে? এটি আসলে আপনার ভেতরকার কোনো সমস্যার দিকেই ইঙ্গিত করছে।
প্রচুর তরল গ্রহণ করুন:
কাশি দেয়ার সময়, আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পানি হারাবেন। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলো বের করে দেয়ার জন্য নিজেকে হাইড্রেটেড রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মধু এবং গোল মরিচের সাথে আদার রস:
কাশির সমস্যা থেকে প্রতিকার পেতে আস্থা রাখতে পারেন এই মিশ্রণের উপরে। মধু শুষ্কতা দূর করে আর আদার রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য। এই মিশ্রণ নিয়মিত পান করলে কাশি দূর হবে দ্রুতই।
পান করুন আদা পানি:
আদা ঠান্ডা, কাশি এবং গলা ব্যথার জন্য আশ্চর্য রকম কার্যকরী। আপনি যদি আদা চা খেতে পছন্দ না করেন তবে এক গ্লাস পানিতে কিছু আদা কুচি মিশিয়ে ২-৩ মিনিটের জন্য ফুটিয়ে নিন। পানিটুকু ছেঁকে নিয়ে তাতে মধু যোগ করুন। মিশ্রণটি সারাদিন অল্প অল্প পান করুন। এটি দ্রুতই আপনার কাশি প্রশমিত করবে।
লবণ পানির গার্গল:
এর মতো সহজ আর কিছুই নেই। এক গ্লাস পানি গরম করুন এবং এতে ১/৪ চা চামচ লবণ দিন। এখন এই পানি দিয়ে দিনে দু-তিনবার গার্গল করুন। উপকার মিলবে।
বাড়িতে তৈরি স্যুপ খান:
সর্দি অত্যন্ত বিরক্তিকর অসুখ। কোনোকিছু খেতেই স্বাদ লাগে না এ সময়। এমন অবস্থায় আপনার নাককে স্বস্তি দিতে বাড়িতে তৈরি চিকেন-ভেজিটেবল স্যুপ খেতে পারেন। আরাম পাবেন। রুচিও বাড়বে।
রসুন:
রসুনে অ্যালিসিন নামে একটি যৌগ থাকে, যা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রোপার্টি হিসাবে পরিচিত। আপনার ডায়েটে রসুন যোগ করলে সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পেতে পারেন। প্রতিদিনের ডায়েটে রসুন রাখলে তা আপনাকে আরও অনেক অসুস্থতা থেকে রেহাই দিতে পারে।
ভিটামিন সি:
আমরা সবাই জানি যে ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। লেবু, কমলা, সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল ইত্যাদি ভিটামিন সি এর সহজলভ্য কয়েকটি উৎস। হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে তা সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ভিটামিন সি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং অন্যান্য অসুস্থতা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
মশলা চা:
নাক বন্ধ থাকলে সেটি যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আদা, গোল মরিচ, লবণ এবং তুলসী পাতা চায়ের সাথে মিশিয়ে জ্বাল করে পান করলে তা সর্দি এবং কাশির জন্য দুর্দান্ত ঘরোয়া উপায় তৈরি করে।
বিশ্রাম:
শারীরিক কার্যকলাপ আসলে আপনার দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। অসুখ কমতে শুরু করলে আপনার বিশ্রাম নেয়া উচিত। বিশ্রামের মতো প্রতিকার নেই। দ্রুত সুস্থ হতে প্রচুর তরল পান করুন।