চিনির চেয়ে গুড় ভালো
চিনির স্বাদ যত মিষ্টি হোক আর খেতে যতই ভালোবাসেন না কেন, চিনি আমাদের শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর সেকথা তো আমরা সবাই জানি। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে নানারকম অসুখ বাসা বাঁধে খুব সহজেই। চিনি এড়াতে মধুর দিকে ঝুঁকছেন, এটি অবশ্যই ভালো অভ্যাস। তবে মিষ্টি স্বাদের জন্য আপনি দ্বারস্থ হতে পারেন গুড়েরও। হ্যাঁ, এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
অনেকে যখন মধুর দিকে ঝুঁকছেন, আপনার মিষ্টি অভিলাষের আরেকটি বিকল্প আছে এবং তা গুড়। হ্যাঁ, গুড় আপনার পক্ষে ভালো হতে পারে। ভারতের পুষ্টিবিদ এবং ডায়েটিশিয়ান কবিতা দেবগন জানিয়েছেন, গুড়ের এমন কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা, যা চিনিতে নেই-
পুষ্টির ঘাটতি মেটায়
গুড় শরীরে পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, তামা, পটাশিয়াম, ভিটামিন-এ, সি, বি, ই জাতীয় পুষ্টি এবং খনিজ রয়েছে, যা আমাদের হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আপনি যদি স্ট্রেসে ভোগেন তবে তা দূর করার জন্য গুড় খান নিয়মিত। কারণ স্ট্রেস দূর করার একটি সহজ উপায় হলো পরপর কয়েক দিন কয়েকটি নিমপাতা দিয়ে গুড় খাওয়া। এটি স্ট্রেস কাটাতে সহায়তা করে। গুড়ে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম থাকায় তা আমাদের নার্ভ শিথিল করতে সাহায্য করে রক্ত চলাচল উন্নত করে। এটি ক্লান্তি এবং মাথা ব্যথা দূর করতে পারে সহজেই।
শরীর সুস্থ রাখে
ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে আপনি যদি চিনির বদলে গুড় খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন, তাহলে উপকার মিলবে। ঋতু পরিবর্তনের সময় হঠাৎ ঠান্ডা লাগা, গলা ব্যথা কিংবা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দূর করার জন্য গুড়ের ব্যবহার বেশ পুরোনো। পরিবর্তিত এ আবহাওয়ায় নিজেকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত গুড় খান।
গুড়ে থাকা ফাইবার আমাদের শরীরে ক্ষতিকর টক্সিনগুলো অপসারণ করে এবং পাচনতন্ত্রকে সহজে পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। এটি গ্যাস্ট্রিক রস নিঃসরণে সহায়তা করে, যা হজমশক্তি উন্নত করে। এটি ক্ষতিকর জীবাণুদের আমাদের কাছে ঘেঁষতে দেয় না। যেহেতু গুড় হজম নিয়ন্ত্রণ করে, তাই এটি ওজন হ্রাসের একটি ভালো মাধ্যম হিসেবেও কাজ করতে পারে। প্রতিদিন খাবারের ছোট্ট একটি গুড়ের টুকরা খাবার আরও ভালোভাবে হজম করতে সহায়তা করে।
গুড়ের অসংখ্য উপকারিতার পাশাপাশি এটিও মনে রাখা জরুরি যে, গুড় আর চিনি কিন্তু সমান পরিমাণ ক্যালরিই দেয়। গুড় বেহিসাবিভাবে খাবেন না। তাতে ওজন বেড়ে যেতে পারে। পরিমাণ মতো খেলে গুড় আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।
ডায়াবেটিস রোগীরা গুড় খেতে পারবে কিনা?
যদিও গুড়ের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, তবে ডায়াবেটিস রোগীরা অবাধে খেতে পারবেন এমন নয়। কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। ডায়াবেটিস রোগীরা গুড় খাওয়ার আগে অবশ্যই পরিমাপ জেনে খেতে হবে।
সঠিক গুড় কীভাবে বেছে নেবেন?
আয়ুর্বেদ মতে, টাটকা গুড় শরীরের পক্ষে খুব ভালো নয়। এটি বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে। এমন গুড় কেনার চেষ্টা করুন ২-৩ যা বছরের পুরোনো। নিয়মিত সঠিক ধরনের গুড় পরিমাণমতো খেলে পার্থক্যটা নিজেই বুঝতে পারবেন।